মৌলবি স্যার | ছোট গল্প
মৌলবি স্যার | ছোট গল্প
গতকাল থেকে আয়াতের স্কুল খুলবে খুলবে বলছে কিন্তু আজ দু'দিন হয়ে গেলেও স্কুল খুলেনি।
বলা নাই কওয়া নাই ক্লাস বন্ধ।
স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে সারাটাদিন টু টু করে ঘুরে আয়াত। দুপুরে জোহরের নামাজের পর খাওয়া ধাওয়া শেষ হলে স্বাভাবিকভাবেই সবাই ঘুমুলেও আয়াত এদিক দিয়ে ভিন্ন, মা যে কত চেষ্টা করে দুপুরে একটু ঘুম যাওয়ার জন্য কিন্তু কে শুনে কার কথা।
দুপুরের ভোজ শেষে স্কুলের মাঠের দিকে রওনা দিতেই পথে দেখা স্কুলের সম্মানিত মৌলবি স্যারের।
সালাম দিয়ে যথারীতি একটু লাজুক হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে আয়াত। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করছে মৌলবি স্যার তাকে সালামের জবাবে শুধু মাথা হাঁকিয়ে গেছে কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। ভেবেছে হয়তো স্যারের কোন কারণে অন্যমনস্ক তাই সালামের উত্তর দেয়নি।
পরেরদিন স্কুল খুললে, বিষয়টি তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে। তখন তার বেশ কয়েকজন সহপাঠীও একই অভিযোগ করলো, বলে মৌলবি স্যার ইদানিং সালাম দিলে নেয় না। মাথা হাঁকিয়ে যায়। তখন আয়াতের বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ লাগে। সে মনস্থির করে আর যারা যারা এভাবে সালাম নেয় না তাদের সালাম দিবে না। ইসলামে সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব, কিন্তু মৌলবি স্যার হয়ে এমন আচরণ সহ্য করা যায় না।
গ্রামের গণ্য মান্য দুয়েকজনও আছে যাদের মধ্যে এই মাথা ঝাঁকানি ব্যারাম জেগে উঠেছে।
স্কুল থেকে ফেরার পথে গ্রামের মাতব্বরের ছেলে জাবের আলিকে দেখেই আয়াত তার সংকল্প প্রথম বাস্তবায়ন করলো। এই জাবের আলি মানুষটা খুবই সুপরিচিত তার কূটবুদ্ধির জন্য। গ্রামে যত ঝামেলা তৈরি হয় সেখানে জাবের আলির অবদান একশো এক পার্সেন্ট বলা যায়। তাই গ্রামের তরুণদের কাছে সে একটা ভাইরাস হিসেবে পরিচিত।
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর, বাড়ি যেতে না যেতেই আয়াতদের বাড়ির পাশে যে ছোট্ট বাজারটি সেখানে হঠাৎ শোরগোল শুনে আয়াত বেরিয়ে আসে।
কাছে যেতেই জানতে পারে জায়গা জমি নিয়ে মারামারি লেগেছে গ্রামের মসিউর রহমানের সাথে তার প্রতিবেশী কোরবান আলীর৷ ঘটনার সূত্রপাত কে করেছে সেটা সবাই জানে তারপরও কেউ কিছু জানে না এমন ভাব ধরে দিন পার করে। এমন ঘটনা সপ্তাহে তিন-চারটা না ঘটলে ধরে নিতে হয় গ্রামে জাবের আলি নাই অথবা মারা গেছে।
রাতে জাবের আলির সাথে আয়াতের বাবার দেখা, শুরু হয় আয়াতের সালাম না দেওয়া নিয়ে অভিযোগ।
বলে কেমন বেদ্দপ ছেলে জন্ম দিলা মিঞা,রাস্তাঘাটে গুরুজনকে সম্মান করে না।
আয়াতের বাবার কাছে বিষয়টা খারাপ লাগে। তিনি জাবের আলিকে কিছু বলে না। হঠাৎ বাড়ি চলে আসে।
এসেই কোন কথা না বলে, ঘরের বাইরে, বাগানের দক্ষিণ দিকটায় যে মেহেদী গাছটা ছিল সেখানকার একটা শক্ত ঢাল ভেঙে নিয়ে ঘরে যেতেই শুনা যায় আয়াতের আর্তনাদ আর্তচিৎকার। বাবার মুখের উপর কথা বলতে সাহস পায় না।
পরদিন থেকে আয়াত আর কাউকে সালাম না দিয়ে থাকতো না। কেউ মাথা নাড়ালেও দিতো না নাড়ালেও দিত।
কমেন্ট